আরব লীগের বিশেষ যৌথ সম্মেলনে এরদোগান
সম্মানিত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ,
সম্মানিত প্রতিনিধি সদস্যগণ,
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের সকলকে আমার অন্তরের গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, আসসালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহু।
আজ আমাদের রিয়াদে একত্রিত করার জন্য আমি পবিত্র দুই মসজিদের সেবক, সৌদি আরবের সম্মানিত বাদশাহ, আমার প্রিয় ভাই সুলতান সালমান বিন আবদুল আজিজকে ধন্যবাদ জানাই।
ইসরাইল গাজা এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি ভূমিতে চালানো গণহত্যার ফলে এখন পর্যন্ত ৫০,০০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, যার ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। আমাদের শহীদদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা, এবং হামাসের রাজনৈতিক শাখার এমন সদস্য রয়েছেন, যারা অস্ত্রবিরতি ও শান্তির জন্য কাজ করছিলেন। আমি এখানে পুনরায় সব শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
নেতানিয়াহুর সরকার একদিকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে লেবাননে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েল এমনকি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সহ্য করতে পারছে না; মিসরে পাঠানো ত্রাণ সামগ্রী মাসের পর মাস আটকে রেখেছে। একদিকে জরুরি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, অন্যদিকে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জরুরি সমাধান খুঁজে বের করা আবশ্যক। তুরস্ক এ পর্যন্ত গাজায় ৮৪ হাজার টনেরও বেশি সহায়তা পাঠিয়েছে এবং বাধা সরিয়ে দিলে আরও বেশি সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত।
ইসরায়েল পার্লামেন্ট সম্প্রতি জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা UNRWA-কে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাতিল এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করার লক্ষ্য নিয়েছে। ইসরায়েলের উদ্দেশ্য গাজা উপত্যকা দখল করা, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি নির্মূল করা এবং শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলকে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত করা। ধাপে ধাপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে, এবং আমাদের তা প্রতিহত করতে হবে।
একদিকে, কিছু পশ্চিমা দেশ সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক দিক থেকে ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে, অন্যদিকে মুসলিম দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ার অভাব দুঃখজনকভাবে পরিস্থিতিকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনে গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের উদ্যোগ সমন্বিতভাবে চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যগুলো যেন এই যৌথ লক্ষ্যে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি যে ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা তাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হোক, এবং আমরা এ বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করি।
প্রিয় ভ্রাতৃগণ,
ইসলামী দেশ হিসেবে আমাদের উচিত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করা। সর্বাগ্রে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা, তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ইতি টানা এবং ইসরায়েলের আগ্রাসন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার জন্য আমাদের উদ্যোগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্যসহ ৫২টি দেশ এবং দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সমর্থন দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায়, সদস্য রাষ্ট্রগুলোসহ যত বেশি দেশ সম্ভব, অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা উচিত। তুরস্ক হিসেবে আমরা ইতোমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছি। ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করার জন্য নেতানিয়াহু সরকারের ওপর ব্যয় ও ক্ষতির চাপ সৃষ্টি করতে পারে এমন যেকোনো বাস্তবসম্মত ও কার্যকর প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুত।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের পরামর্শমূলক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত ফিলিস্তিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আমি মনে করি, এর বাস্তবায়ন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রিয় ভাইয়েরা,
আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি যে বর্তমান ইসরায়েলি সরকারের সম্মতি নিয়ে দুই-রাষ্ট্র সমাধানে পৌঁছানো অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে, আরও বেশি দেশকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করা উচিত। আসলে, ৭ অক্টোবর থেকে ৯টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে নিরাপত্তা পরিষদের বাধা অতিক্রম করে, আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের দিনগুলি দেখব।
দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে অগ্রসর করার জন্য ৩০-৩১ অক্টোবর রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জোট সম্মেলনে ৯০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণ আশা জাগানিয়া।
আমি প্রার্থনা করি যে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা এবং আরব লীগ ফিলিস্তিন বিষয়ক ক্ষেত্রে একমত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। আমি আশা করি গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো প্রতিটি দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করবে।
আমার বক্তব্য শেষ করার আগে, আজকের সভা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ফিলিস্তিন ও লেবাননের জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে বলে আশা প্রকাশ করছি। এই সভার আয়োজন এবং সফল বাস্তবায়নে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।