ক্ষুদে চিন্তা – ৩
ক্ষুদে চিন্তা – ৩
১০১
কেবল দু’জনে মিলে প্রেম হয় না। প্রেম করার জন্যে প্রয়োজন হয় প্রকৃতি ও পরিবারের।
একজন মানুষের প্রেম শুরু হয়, যখন সে তার প্রিয় মানুষকে সাগর-নদী, চাঁদ-তারা, আকাশ-বাতাস অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে তুলনা দেয়।
আর, একজন মানুষের প্রেম পূর্ণ ও সঠিক হয়, যখন সে তার প্রিয় মানুষকে পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। অর্থাৎ, বিয়ে করে ফেলে।
তাই, একা একা প্রেম হয় না। প্রকৃতি ও পরিবারের সাহায্য নিয়েই প্রেম চালিয়ে যেতে হয়।
১০২
বাংলাদেশ সম্পর্কে শাইখ হামজা ইউছুফ বলেন
“আমি মনে করি, বাঙালিরা খুবই বিনয়ী মানুষ। আল্লাহর কসম, বাংলাদেশের মানুষ খুবই বিনয়ী।
৫০০ বছর আগে বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ ছিলো বাংলাদেশ। এটি ছিলো এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে সভ্য একটি দেশ।
১৬ শতাব্দীতে ব্রিটিশরা প্রথম যখন ঢাকায় আসলো, তখন তারা বিশ্বাস করতে পারেনি, কতটা উন্নত ছিলো ঢাকা শহর। বাংলাদেশের ছিলো মহান ঐতিহ্য। এবং তারা ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে সভ্য মানুষ।”
১০৩
মানুষের নফস হলো একটি ঘোড়ার মত। ঘোড়ার সাহায্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া যায়, যুদ্ধ করা যায়।
নফস বা ঘোড়াকে যদি আদব ও শৃঙ্খলা শেখানো যায়, তাহলে তার দ্বারা অনেক উপকার হয়। কিন্তু, নফস বা ঘোড়াকে যদি শৃঙ্খলা না শিখানো যায়, তাহলে তার দ্বারা অনেক ক্ষতি হয়।
১০৪
জ্ঞানী ও মূর্খ উভয়ে ভুল করেন। পার্থক্য হলো, জ্ঞানীরা খুব সহজেই তাঁদের ভুল স্বীকার করেন, কিন্তু মূর্খরা কিছুতেই তাঁদের ভুল স্বীকার করতে চান না।
১০৫
“অতীতের স্কলার বা আলেমদের কোন কোন চিন্তা বর্তমানে কাজে লাগবে, এবং কোন কোন চিন্তা বর্তমানে কাজে লাগবে না, তা নির্ধারণ করাই সমসাময়িক স্কলার বা আলেমদের কাজ।”
– ফখরুদ্দিন আল রাজি।
১০৬
অন্যের জন্যে ধৈর্য ধারণ করার নাম ভালোবাসা। নিজের জন্যে ধৈর্য ধারণ করার নাম আশা। এবং আল্লাহর জন্যে ধৈর্য ধারণ করার নাম বিশ্বাস।
১০৭
খাবারের মাঝে লবণের যেমন প্রয়োজন, আমাদের জীবনে পৃথিবীর তেমন প্রয়োজন।
পরিমাণ মত লবণ ব্যবহার করলে খাবার খুবই সুস্বাদু হয়। কম লবণ দিলে খাবার কোনোভাবে খাওয়া যায়। কিন্তু বেশি লবণ পড়লে খাবার মোটেও খাওয়া যায় না।
তদ্রূপ, পরিমাণ মত পৃথিবীকে অর্জন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সুখ পাওয়া যায়। পৃথিবীকে বর্জন করলেও কষ্ট করে পৃথিবীতে চলা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত পৃথিবীর প্রেমে পড়লে জীবন বিষণ্ণ হয়ে যায়।
১০৮
সময়ের অপর নাম মানুষ। মানুষ ভালো হলে আমরা বলি সময়টা ভাল। মানুষ খারাপ হলে আমরা বলি সময়টা খারাপ।
১০৯
ভালোবাসা যুক্তির বিপরীত প্রান্তে নয়, বরং যুক্তির সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করে।
১১০
বর্তমান হলো অতীতের ফল ও ভবিষ্যতের কারণ।
আমরা এখন যে বর্তমানকে দেখছি, তা হলো অতীতের অনেকগুলো ঘটনার ফলাফল। একইভাবে, আমরা এখন যে কাজগুলো করছি, সেটাই ভবিষ্যতকে নির্মাণ করবে।
১১১
আমাদের বর্তমান সময়ে, তথ্য পাওয়া খুবই সহজ, কিন্তু জ্ঞানী হওয়া খুবই কঠিন।
১১২
ইমাম বোখারী খুবই মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান একজন মানুষ ছিলেন। তিনি প্রায় ১ লক্ষ সহীহ হাদিস মুখস্থ করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর প্রজ্ঞা ও যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে ১ লক্ষ সহীহ হাদিস থেকে বাছাই করে মাত্র ৭,৫৬৩ টি হাদিস তিনি গ্রহণ করেছেন। বাকি হাজার হাজার হাদিস সহীহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাদ দিয়েছেন।
তেমনি, আমরাও কোনো সহীহ হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোর’আন ও যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা উচিত। এটাই সালফে সালিহীনদের সুন্নত।
১১৩
ভালোবাসা অসীম। পৃথিবীর সকল স্থানে ভালোবাসা ছড়িয়ে থাকে। ভালোবাসাকে কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেললে, সে ভালোবাসা মারা যায়। ভালোবাসা তখন যন্ত্রণায় পরিণত হয়।
আমরা অধিকাংশ সময়ে অপাত্রে ভালোবাসা প্রদান করি, তাই আমাদের ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের পরিবার, পথশিশু, এতিম, চাকর-চাকরানী, দুর্বল মানুষ ও আমাদের অধীনস্থরা সব সময় আমাদের থেকে ভালোবাসা পাবার জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকে। আমরা তাঁদের মাঝে ভালোবাসার বীজ বপন না করে নষ্ট জমিতে ভালোবাসার চারা লাগাই। ফলে যত কষ্ট করেই ভালোবাসার চারা রোপণ করি না কেন, দিনশেষে সব নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমরা বলতে শুরু করি, ‘ভালোবাসার অপর নাম যন্ত্রণা’।
১১৪
পৃথিবীর সকল জ্ঞান সৃষ্টি হয়েছে আসমানি কিতাবকে ব্যাখ্যা করার জন্যে।
১১৫
তিনটি গুনাহ কল্পনা করুন। কোর’আন না পড়া। দাঁড়ি না রাখা। এবং অহংকার করা।
এবার, যদি সাধারণ একজন মানুষকে বলেন যে, এ তিনটি গুনাহকে বড় থেকে ছোট আকারে সাজান।
তিনি বলবেন – ১) দাঁড়ি না রাখা > ২) কোর’আন না পড়া > ৩) অহংকার করা।
কিন্তু, আপনি যদি কোর’আন পড়া একজন মানুষকে বলেন যে, এ তিনটি গুনাহকে বড় থেকে ছোট আকারে সাজান।
তখন তিনি বলবেন – ১) অহংকার করা > ২) কোর’আন না পড়া > ৩) দাঁড়ি না রাখা।
১১৬
আমরা সাধারণ মানুষেরা কিছু বিষয়কে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকি, কিন্তু কোর’আন সেটাকে খুবই কম গুরুত্ব দেয়। আবার, আমারা কিছু বিষকে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকি, কিন্তু কোর’আন সেটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।
১১৭
মানুষ দুটি কারণে গুনাহ করে থাকে। এক – অজ্ঞতা, দুই – অহংকার।
অজ্ঞতার কারণে মানুষ যে গুনাহ করে তার নাম পাপ। আর, অহংকারের কারণে মানুষ যে গুনাহ করে তার নাম অন্যায়।
অজ্ঞতা ও পাপ থেকে মানুষ সহজে ফিরে আসতে পারলেও অহংকার ও অন্যায় থেকে মানুষ সহজে ফিরে আসতে পারে না।
এ কারণেই, আদম (আ) এর গুনাহ থেকে তিনি ফিরে আসতে পারলেও ইবলিস তার গুনাহ থেকে ফিরে আসতে পারেনি।
১১৮
ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান – এগুলোর প্রত্যেককে আলাদা আলাদা কল্পনা করাটা জ্ঞানের শিরক।
অন্যদিকে, সকল জ্ঞানের সমন্বয় সাধন করাকে বলা যায় জ্ঞানের তাওহীদ।
১১৯
আধুনিকতা আমাদেরকে কিছু উপহার দিয়েছে।
১। সৌন্দর্য ছাড়া শিল্প।
২। ছন্দ ছাড়া কবিতা।
৩। আলো, বাতাস ও সবুজ ঘাস ছাড়া বাসা-বাড়ি।
৪। কণ্ঠ ছাড়া বাদ্যের গান। এবং
৫। ভদ্রতা ছাড়া সমালোচনা।
১২০
সেক্যুলারিজম এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ উভয়ে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বা, থিসিস ও এন্টি-থিসিস।
সেকুলারিজম মানুষকে ধর্ম ছাড়ার জন্যে বাধ্য করে, আর ধর্মীয় উগ্রবাদ মানুষকে ধর্ম পালন করতে বাধ্য করে।
উভয়ে মানুষের স্বভাবগত ও স্বাধীন ইচ্ছার বিরোধী।
১২১
ধরুন, আহলে হাদিস, হানাফি, অথবা তাবলীগের কোনো মানুষ সপ্তাহে একদিনও কোর’আন পড়ার সুযোগ পান না।
কিন্তু,
বিএনপি বা আওয়ামী লীগের একজন মানুষ সপ্তাহের প্রতিদিন কোর’আন পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রশ্ন হলো, এ দু’জন ব্যক্তির মাঝে কে বেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা আছে?
আমরা একে অপরকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্যে যত সময় ব্যয় করি, কোর’আন নিয়ে তত সময় ব্যয় করি না।
অথচ, আল্লাহ তায়ালা বলেন –
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُوا۟ مِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ سِرًّۭا وَعَلَانِيَةًۭ يَرْجُونَ تِجَـٰرَةًۭ لَّن تَبُورَ
“যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে, এবং আমি যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না।” [সূরা ৩৫/ফাতির – ২৯]
দেখুন, এই আয়াতে সালাত কায়েমের আগে কোর’আন অধ্যয়ন করার কথা বলা হয়েছে। আমরা সালাতে হাতবাঁধা ও ‘আমীন’ নিয়ে যত বিতর্ক করি, কোর’আন নিয়ে কি তত কথা বলি?
১২২
আকাশ দেখার নেশা যাদের আছে, অথবা, যারা খুব সহজে শিশুদেরকে নক্ষত্র বিজ্ঞান শেখাতে চান, তাঁরা Stellarium সফটওয়ারটি ব্যবহার করতে পারেন।
ওয়েব সাইটে (http://www.stellarium.org) ডাউনলোডের লিঙ্ক সহ বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা দেয়া আছে। আকাশ প্রেমীদের জন্যে এটা খুবই উপকারী এবং সম্পূর্ণ ফ্রি একটি সফটওয়ার।
১২৩
মুসলিমদের বিজ্ঞানের ইতিহাস ও সরঞ্জামগুলো দিয়ে ড ফুয়াদ সেজগিন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনেক বড় একটি জাদুঘর করেছেন।
আপসোস করার কোনো কারণ নেই। আপনি বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন হেঁটে হেঁটে জাদুঘরটি দেখার সুব্যবস্থা তারা করে রেখেছেন। জাস্ট ক্লিক করুন, এবং সামনে যেতে থাকুন।
http://en.ibtav.org/virtualtour
১২৪
ঈদের দিনে আমি মানুষের নতুন পাঞ্জাবি বা জামার দিকে তাকিয়ে থাকি।
আমার কাছে কেন যেনো মনে হয়, একজন মানুষের সাইকোলজি বুঝার জন্যে তার ঈদের দিনের নতুন জামা বা পাঞ্জাবিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত ঈদের জামা কিনার সময়ে কোনো মানুষকে তার স্কুল, কলেজ, চাকরি বা ব্যবসার জন্যে মানানসই কোনো জামার কথা ততটা চিন্তা করতে হয় না। মানুষ স্বাধীনভাবে নিজের পছন্দ অনুযায়ী অথবা পছন্দের মানুষের পছন্দ অনুযায়ী ঈদের জামা কিনে। ফলে ঈদের জামা বা পাঞ্জাবিতে খুব সহজে মানুষের সাইকোলজি ধরা পড়ে।
তবে সমস্যা হয় তখন, যখন কেউ খুব সাদামাটা কিছু গায়ে দিয়ে ঈদ করেন। এসব মানুষের সাইকোলজি বোঝা খুব মুশকিল।
১২৫
বাংলাদেশে দু’একটি শিয়া মসজিদ আছে। চার-পাঁচটা আহলে হাদিসের মসজিদ আছে। অল্প কিছু খাজা বাবাদের মসজিদ আছে। এবং কিছু হানাফি মসজিদ আছে।
এ ছাড়া বাদবাকি লক্ষ লক্ষ মসজিদ সব মুসলিমদের।
১২৬
অহংকার এমন একটি অভ্যাস, যাকে একদিনে বা এক মাসে পরিবর্তন করা যায় না। অহংকারকে দূর করার জন্যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করতে হয়।
১২৭
আমরা অন্তরের জগতে যতবেশি সজাগ ও সচেতন হই, বাইরের জগতে ততবেশি নীরব হয়ে যাই। অন্যদিকে, আমরা বাইরের জগতে যতবেশি সজাগ ও তৎপর থাকি, অন্তরের জগতে ততবেশি নীরব হয়ে যাই।
১২৮
“গণিত এমন একটি ভাষা যা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগতকে লিখেছেন।”
– গ্যালিলিও গ্যালিলেই
“Mathematics is the language in which God has written the universe”
― Galileo Galilei
১২৯
নাস্তিকগণ বলেন, বিশ্বজগত এমনি এমনিই সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ও মানুষের বুদ্ধিও এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, মানুষের আবিষ্কৃত গণিতের সাথে বিশ্ব জগতের সবকিছুর হিসাব (fine tuning) মিলে যাচ্ছে কেন?
এর কারণ হচ্ছে, মানুষ, তার জ্ঞান ও বিশ্বজগত সবকিছু আল্লাহ থেকে এসেছে। আল্লাহর সৃষ্টি।
১৩০
ইসলামকে ধারণ করার ক্ষমতা সেকুলারিজমের নেই। তবে সেকুলারিজমকে ধারণ করার ক্ষমতা ইসলামের আছে।
১৩১
রাসূল (স) –এর নিজের কোনো ব্যবসা ছিল না, ব্যবসা ছিল তাঁর স্ত্রীর।
রাসূল (স) –এর নিজের কোনো ঘর ছিল না। তিনি থাকতেন তাঁর স্ত্রীদের ঘরে।
আফসোস! জগতে রাসূলের মতো পুরুষের যেমন অভাব, তেমনি ব্যবসায়ী নারী অথবা বাড়ি ওয়ালা নারীরও খুব অভাব।
১৩২
কোর’আনের তাফসীর নিয়ে আমার দেখা সবচেয়ে ভালো একটি ওয়েব সাইট হলো – http://www.altafsir.com
জর্ডানের একটি সংগঠন এই ওয়েব সাইটটি পরিচালনা করে। এর ভালো দিক হলো, এখানে আপনি ক্লাসিক্যাল, সুন্নি, শিয়া, সালাফি, সুফী, জায়দি, আবাদি, জাফরি, মডার্ন, এবং বিভিন্ন পন্থীদের তাফসীর একসাথে দেখতে পারবেন। বেশ কিছু তাফসীরের ইংরেজি ভার্সনও আছে।
যারা কোর’আনকে সব এঙ্গেল থেকে এবং সামগ্রিকভাবে দেখতে চান, তারা এটি দেখতে পারেন।
১৩৩
সমালোচনাকে আমি ভালোবাসি। কারণ, সমালোচনা মানুষকে সত্য পেতে সাহায্য করে।
প্রশংসাকে মানুষ ভালোবাসে। কারণ, প্রশংসা পেলে মানুষকে সত্য খোঁজার কষ্ট করতে হয় না।
১৩৪
জাকারিয়া আল কাযভীনী একজন মুসলিম বিজ্ঞানী। তিনি ১২০৩ সালে ইরানে জন্ম গ্রহণ করেন, এবং ১২৮৩ সালে ইরাকে মৃত্যু বরণ করেন। অর্থাৎ, চার্লস ডারউইনের ছয়’শ বছর আগে তাঁর জন্ম।
বিভিন্ন প্রাণীদের বিবর্তন তিনি একটি বই লিখেন। নাম – “সৃষ্টির বিস্ময় ও অদ্ভুত অস্তিত্ব” / The Wonders of Creation and the Curiosities of Existence / عجائب المخلوقات و غرائب الموجودات
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে আল কাযভীনী যেসব অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পান, তা বিস্তারিত লিখে ও অংকন করে যান তাঁর এ বইয়ে।
বইটির কয়েকটি পৃষ্ঠা গুগলে আছে, দেখুন।
১৩৫
একজন অসহিষ্ণু বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের মোড়কে তার অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেন। একজন অসহিষ্ণু শিল্পী শিল্পের মোড়কে তার অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেন। একজন অসহিষ্ণু বুদ্ধিজীবী টেলিভিশনের টক-শো এসে তার অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেন। একজন অসহিষ্ণু ধার্মিক ভালো কথার মোড়কে তার অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেন।
আমাদের প্রত্যেক মানুষের একটি খারাপ গুন হলো অসহিষ্ণুতা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহিষ্ণু হবার তৌফিক দান করুক।
১৩৬
– ইবলিস কি নাস্তিক ছিল না আস্তিক ছিল?
: অবশ্যই আস্তিক ছিল।
– তারপর, আদম (আ)-কে সেজদা না করার কারণে সে কি নাস্তিক হয়ে গিয়েছিলো?
: অবশ্যই না।
– তাহলে, ইবলিসকে মুমিন বা বিশ্বাসী না বলে কাফির বলা হয় কেন?
: কারণ, কেবল আল্লাহর অস্তিত্বের স্বীকার করা মানে আল্লাহকে বিশ্বাস করা নয়, বরং আল্লাহর আদেশ মেনে চলা মানেই হলো আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
ইবলিসের মত অনেক অস্তিক আছেন, যারা আল্লাহকে স্বীকার করে, কিন্তু বিশ্বাস করে না।
১৩৭
সন্তান বাবার বংশ হলেও প্রকৃত অর্থে মায়ের-ই অংশ।
মা খারাপ কিন্তু সন্তান ভালো হয়েছে, এমন কোনো উদাহরণ কোর’আনে নেই। কিন্তু বাবা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সন্তান ভালো হয়েছে, এমন উদাহরণ কোর’আনে প্রচুর।
তাই,
ভালো সন্তানের জন্যে ভালো বাবার চেয়ে ভালো মায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনেক বেশি।
১৩৮
“মায়ের অনুগত থাকতে আমাকে আদেশ করা হয়েছে। তিনি আমাকে খারাপ ও অহংকারী হিসাবে সৃষ্টি করেননি।”
– আল কোর’আন, সূরা মারিয়াম, আয়াত ৩২।
১৩৯
আমাদের পিঠ আমরা দেখি না। পিঠ দেখতে হলে দুটি আয়নার প্রয়োজন হয়। একটি আয়না পিঠের পিছনে, এবং অন্য একটি তার বরাবর চোখের সামনে রাখতে হয়। তারপর আমরা আমাদের পিঠ দেখি।
ঠিক একইভাবে,
পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা আমরা যা কিছু ধারণ করি, তা মস্তিষ্কে একটি দৃশ্য তৈরি করে, এবং একইসাথে হৃদয়েও একটি দৃশ্য ধারণ করে। হৃদয়ের ধারণকৃত দৃশ্যই হলো আমাদের উপলব্ধি।
১৪০
হেফজতে ইসলামকে খুন করে সরকার বললেন, তারা গায়ে রক্ত লাগিয়ে রেখেছে।
ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল ইউসুফ (আ)-এর ক্ষেত্রে। ইউসুফ (আ)-কে তাঁর ভাইয়েরা কুয়ায় ফেলে দিয়ে ইউসুফের জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে এনে বলেছিলেন, ইউছুফকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে।
সূত্র – আল কোর’আন ১২-২৮
১৪১
পঞ্চইন্দ্রিয় গুপ্তচরগণ নিজ নিজ এলাকার সংবাদ একত্রিত করে মস্তিষ্কের সামনের অংশে বা কল্পনাশক্তি নামক বিশেষ দূতের কাছে প্রেরণ করে। দূত এই সংবাদগুলো মস্তিষ্কের পিছনে বসে থাকা স্মৃতিশক্তি নামক কোষাধ্যক্ষের নিকট প্রেরণ করে। কোষাধ্যক্ষ অতীতের সকল হিসাব সহ একসাথে হৃদয় নামক বাদশাহর নিকট প্রেরণ করে। বাদশাহ তার বোধশক্তির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় সংবাদ যাচাই করে সৈন্য বাহিনী বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে কাজের আদেশ করে।
এই কাজটি এত দ্রুত হয় যে সব মানুষ বুঝতে পারে না।
১৪২