ইকামাতে দীন’ ও ‘ ইকামাতে শরিয়া’র মধ্যে পার্থক্য

ইসলামী রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত পরিভাষার নাম ‘ইকামাতে দীন’। অনেকে ‘ইকামাতে দীন’কে ‘ইকামাতে শরিয়া’ হিসাবে চালিয়ে দেন। অথচ দীন ও শরিয়া শব্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

সমগ্র মানবজাতির জন্যে আল্লাহর মনোনীত দীন একটাই, ইসলাম। প্রত্যেক নবী-রাসূল এই দীন-ইসলামটাই অনুসরণ করেছিলেন। যেমন কোর’আনে বলা হয়েছে –

وَوَصَّىٰ بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ

“ইব্রাহীম ও ইয়াকুব তাদের সন্তানকে এ উপদেশ দিলেন যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।” (সূরা ২/বাকারা- ১৩২)

যদিও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত দীন একটাই, কিন্তু আল্লাহর মনোনীত শরিয়ত একটা নয়। আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্যেই একটা নির্দিষ্ট শরিয়ত দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন –

لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً

“আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি করে আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন” (সূরা ৫/মায়িদা – ৪৮)

উপরের দুটি আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, দীন ও শরিয়া এক নয়। আল্লাহর মনোনীত দীন একটাই, কিন্তু আল্লাহর মনোনীত শরিয়া অনেক হতে পারে। প্রত্যেক নবীর দীন একটাই ছিলো, কিন্তু শরিয়া ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। দীন সব সময় অপরিবর্তনশীল, কিন্তু শরিয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিবর্তন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

এবার আসি, আরো সহজে দীন ও শরিয়ার মাঝে পার্থক্যটা বুঝি –

সৎ কাজ করো, অসৎ কাজ করো না, নামাজ পড়, জাকাত দাও, চুরি করো না, জেনা করো না, হত্যা করো না — এগুলো হলো দীন। প্রত্যেক নবী-রাসূলের সময়ে এ নিয়মগুলো ছিলো।

কিন্তু, কেউ অসৎ কাজ করলে তার কী শাস্তি হবে? চুরি করলে কী শাস্তি হবে? জেনা করলে কী শাস্তি হবে? মানুষ হত্যা করলে কী শাস্তি হবে? — এসব হলো শরিয়া। প্রত্যেক নবী-রাসূলের শাস্তির ধরণ ভিন্ন ভিন্ন ছিলো।

‘ইকামাতে দীন’ মানে সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। এতটুকুই এর সীমানা। যখন আমরা সৎ কাজের পুরস্কার ও অসৎ কাজের শাস্তি বাস্তবায়ন করতে চাই, তখন আর সেটা ‘ইকামাতে দীন’ থাকে না, সেটা হয়ে যায় ‘ইকামাতে শরিয়া’।

ইসলামের ইতিহাসে উমার (রা) থেকে শুরু করে অনেক মুসলিম শাসক পরিস্থিতির আলোকে কখনো শরিয়ার আইন স্থগিত করেছেন, কখনো নবীর চালু করা আইনের বিপরীতেও মত দিয়েছেন, কিন্তু ইকামাতে দীনের ক্ষেত্রে সবসময় সবাই একই ছিলেন, ছাড় দেননি। পরিস্থিতির কারণে শরিয়ার কোনো আইন স্থগিত করা আর দীন প্রতিষ্ঠার কাজ স্থগিত করা একই কথা নয়।

4 March 2:38 pm 2020

আরো পোস্ট